
প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক এম এস কে প্রসাদের একটা মন্তব্য ভারতীয় ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন তুলেছিলো ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে। ইংল্যান্ডগামী দলে তামিলবাড়ুর অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করকে জায়গা দেওয়া প্রসঙ্গে প্রসাদ জানিয়েছিলেন, ‘থ্রি ডি প্লেয়ার’ বলে দলে জায়গা পেয়েছেন তিনি।
এরপর আন্তর্জাতিক আঙিনায় নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় বারবার কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিলো শঙ্করকে। বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে প্রসাদের সেই থ্রি ডি প্লেয়ার কথাটি। যাঁর জায়গায় বিশ্বকাপে জায়গা দেওয়া হয়েছিলো শঙ্করকে , সেই অম্বাতি রায়ডু কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, “থ্রি ডি চশমা অর্ডার দিলাম বিশ্বকাপ দেখবো বলে।”
২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে যাত্রা শেষ হয়েছিলো ভারতের। থমকে গিয়েছিলো বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। এখন ২০২৩ সাল। চার বছর কেটে গেছে।
চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আবার বসবে একদিনের বিশ্বকাপের আসর। তার আগে বিজয় শঙ্করের পক্ষ নিয়ে মুখ খুললেন ২০১৯ সালে ভারতের কোচের পদের থাকা রবি শাস্ত্রী।
গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে গুজরাত টাইটান্স জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন বিজয় শঙ্কর। আইপিএলে এক স্মরণীয় ইনিংস খেললেন তিনি। ২৪ বলে করলেন ৬৩* রান। এই ইনিংসের পরেই শঙ্করের স্বপক্ষে বয়ান দিলেন শাস্ত্রী।
এক ঐতিহাসিক IPL ম্যাচের সাক্ষী থাকলো রবিবারের আহমেদাবাদ। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্স অধিনায়ক রশিদ খান।
দুই ওপেনার শুভমান গিল এবং ঋদ্ধিমান সাহাকে দ্রুত গতিতে রান তূলতে দেখা যায় নি গতকাল। দুজনেই সুনীল নারাইনের শিকার হন। সাই সুদর্শনকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাত টাইটান্সকে বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান বিজয় শঙ্কর । ৫৩ রান করে আউট হন বছর একুশের সাই।
এরপর শেষের ওভারগুলোয় ঝড় তোলেন বিজয় শঙ্কর। ৪টি চার এবং ৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ২৪ বলে ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। প্রায় ২৬৩ স্ট্রাইক রেট-সহ তাঁর এই ইনিংসের সুবাদে ২০৪ রান বোর্ডে যোগ করে গুজরাত।
তবে চমকের বাকি ছিলো আরও। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট হারানো কলকাতার ইনিংসকে টানলেন অধিনায়ক নীতিশ রানা এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার ।
৩৯ বলে ৮৩ করেন আইয়ার। মধ্যপ্রদেশের বাঁ-হাতি ব্যাটার আউট হয়ে ফিরতে দেখা গেলো রশিদ ম্যাজিক। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন এবং শার্দূল ঠাকুরকে পরপর তিন বলে ফিরিয়ে ২২তম আইপিএল হ্যাট্রিকের মালিক হলেন রশিদ ।
শেষ ওভারে নাইট রাইডার্সের বাকি ছিলো ২৯ রান। প্রথম বলে সিঙ্গল নেন উমেশ যাদব। পরের ৫ বলে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে ম্যাচ জেতান রিঙ্কু সিং ।
রিঙ্কু অভাবনীয় ব্যাটিং-এ গুজরাত (GT) ম্যাচ হারলেও রেকর্ড বইয়ের পাতায় জায়গা করে নিলেন বিজয় শঙ্কর। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে শেষ দুই ওভারে তিনি ৪১ রান তোলেন। আইপিএলের ইতিহাসে তা যুগ্ন তৃতীয় সর্বোচ্চ।
শীর্ষে রয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং বিরাট কোহলি । তাঁর শেষ দুই ওভারে ৪৪ রান তুলেছেন। বিজয় শঙ্কর এই রেকর্ড গতকাল ভাগ করে নেন রিঙ্কু সিং-এর সঙ্গে।
২০১৯ বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করতে না পারার জন্য এত বছর পরেও যে প্রায়ই কটাক্ষ শুনতে হয় বিজয় শঙ্করকে, তা তাঁর প্রাপ্য নয় বলেই মনে করেন রবি শাস্ত্রী ।
টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কোচ তাঁর পুরনো ছাত্র সম্পর্কে বলেছেন, “বিজয় শঙ্কর ২০১৯-এর বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছিলো কারণ ও একজন বিশেষ প্রতিভা।
ও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে, কিন্তু ও দারুণভাবে ফিরে এসেছে। ও বড় শট দারুণভাবে মারতে পারে। বিজয় শঙ্করের হাতে রকমারি শট রয়েছে, ওর উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে বহু দূরে বল পাঠাতে পারে।”
Leave a Reply